Tuesday, April 15, 2025

বাঙলা সনের ইতিহাস ও পহেলা বৈশাখ: শাসন, সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্যের এক দীর্ঘপথ

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN No comments

বাংলা সন ও পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই দিনপঞ্জির জন্ম, বিবর্তন ও বিস্তৃতি কেবল সময় গণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রূপান্তরের প্রতিচ্ছবি। ইতিহাসের ছেঁড়া পাতাগুলিকে একত্রে জুড়লে আমরা পাই একটি বিস্ময়কর ঐতিহ্যগাঁথা—যা আজকের ‘নববর্ষ উৎসব’ নাম ধারণ করে প্রত্যেক বাঙালির জীবনে এক তাৎপর্যময় দিন হিসেবে ফিরে আসে।

তারিখ-এ-এলাহী: এক প্রাচীন শিকড়

বলা হয়ে থাকে, বাংলার প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক দিনপঞ্জির নাম ছিল তারিখ-এ-এলাহী। এটি ছিল সম্রাট আকবর প্রবর্তিত এক নতুন সনের নাম, যার মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন সাম্রাজ্যজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সময়ের একক ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা করতে। "দীন-ই-ইলাহি" মতবাদের ধারাবাহিকতায় এই তারিখের সূচনা ঘটে। যদিও তারিখ-এ-এলাহী নামটি ইতিহাসে খুব বেশি স্থায়ী হয়নি, তবে এটি বাংলা সনের ভিত্তিভূমি নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই সনের মাসের নামগুলো ছিল পারসিক প্রভাববাহী, যেমন:

  • কারবাদিন

  • আর্দি

  • বিসুয়া

  • কোর্দাদ

  • তীর

  • আমার্দাদ

  • শাহরিয়ার

  • আবান

  • আজুর

  • বাহাম

  • ইস্কান্দার মিজ

এগুলোর বেশিরভাগের উৎপত্তি ছিল পারসিক সৌর দিনপঞ্জি ও রাজপ্রথা থেকে। একে একপ্রকার "ইরানি সৌর বর্ষপঞ্জি" হিসেবে ধরাই যায়।

আকবরের বিপ্লবী সংস্কার: ফসলি সন

১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে আকবরের সিংহাসনে আরোহণের পর ভারতে মুঘল প্রশাসনের কাঠামোকে আরও সুসংগঠিত করতে প্রয়োজন দেখা দেয় একটি সার্বজনীন অর্থনৈতিক বর্ষপঞ্জির। তখন প্রচলিত ছিল হিজরি সন, যা চাঁদের উপর নির্ভরশীল এবং কৃষিভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য উপযোগী ছিল না।

এর ফলে, রাজস্ব আদায়ের সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ফসলি সন চালু করা হয়। এই নতুন সন গণনা করা হয় সৌর পঞ্জিকা ও হিজরি বর্ষের সমন্বয়ে। আকবরের রাজকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফতেহউল্লাহ সিরাজি এই বর্ষপঞ্জির কাঠামো নির্মাণ করেন।

ফসলি সনের মূল উদ্দেশ্য ছিল:

  • কৃষি চক্র অনুযায়ী কর আদায় নিশ্চিত করা

  • ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একক সময়সূচি প্রচলন

  • প্রশাসনিক কাজের গতি বাড়ানো

বাংলা মাসের নামকরণ: নক্ষত্রের ছায়ায়

এই অঞ্চলের অনেক প্রাচীন সংস্কৃতি ও ভাষার মতো বাংলা মাসগুলির নামকরণেও জ্যোতিষ ও নাক্ষত্রিক পঞ্জিকার প্রভাব লক্ষণীয়। হিন্দু সৌর পঞ্জিকা অনুসারে এই নামগুলো এসেছে ভারতীয় নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে।

নক্ষত্রভিত্তিক মাসের ব্যুৎপত্তি উদাহরণস্বরূপ:

  • বৈশাখ – বিশাখা নক্ষত্র

  • জ্যৈষ্ঠ – জ্যৈষ্ঠা

  • আষাঢ় – শার

  • শ্রাবণ – শ্রাবণী

  • ভাদ্র – ভদ্রপদ

  • আশ্বিন – আশ্বায়িনী

  • কার্তিক – কার্তিকা

  • অগ্রহায়ণ – আগ্রায়হন

  • পৌষ – পউস্যা

  • মাঘ – মাঘা

  • ফাল্গুন – ফাল্গুনী

  • চৈত্র – চিত্রা

বিশেষ তথ্য:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাসে নারী চরিত্র যেমন ‘চারুলতা’, ‘বিমলা’, ‘শোভনা’ প্রভৃতি নাম এই নক্ষত্র/মাস নামকরণ প্রথা থেকে অনুপ্রাণিত বলেই অনেকে মনে করেন।

নববর্ষের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ও পুণ্যাহ উৎসব

বাংলার সুবাদার মুর্শিদ কুলি খান বাংলা সনের উপর ভিত্তি করে প্রথম ‘পুণ্যাহ উৎসব’ পালন শুরু করেন। এই উৎসব ছিল জমিদারি কর আদায়ের এক উৎসবমুখর আয়োজন। জমিদাররা প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায়ের পাশাপাশি আয়োজন করতেন গান, বাজনা, মিষ্টান্ন বিতরণ। এটি ছিল প্রশাসনিক কর্মযজ্ঞ এবং জনসম্পৃক্ততা তৈরির এক কৌশল।

পুণ্যাহ শব্দটির অর্থ – "পবিত্র দিন", কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল ‘রাজস্ব আদায়ের দিন’।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাঙালি সমাজে বাংলা বছরের সূচনার ধারণা রূপ নেয় উৎসবে।

বাংলা সনের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা

প্রথমদিকে এটি মুসলমান শাসক এবং হিন্দু জমিদার শ্রেণির মধ্যে সীমিত থাকলেও পরবর্তী সময়ে এটি সাধারণ কৃষক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। কারণ:

  • কৃষিকাজ ও মৌসুমের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বর্ষপঞ্জি

  • ব্যবসায়িক হিসাবরক্ষণ সহজতর

  • সামাজিক উৎসব পালনের নির্দিষ্ট দিন

বাংলা একাডেমির সংশোধন ও আধুনিকীকরণ

১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি বাংলা পঞ্জিকায় একটি ঐতিহাসিক সংশোধন আনে। এই সংশোধনে:

  • প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল ১লা বৈশাখ নির্ধারণ করা হয়

  • মাসগুলোর দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয় নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনে (৩০ বা ৩১)

  • ঈদের মতো উৎসবসমূহ নির্ভর করে চাঁদের উপর, কিন্তু নববর্ষ নির্ভর করে সৌর বর্ষের উপর

এর মাধ্যমে বাংলা পঞ্জিকা আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য লাভ করে।

পশ্চিমবঙ্গ বনাম বাংলাদেশ: পঞ্জিকার বিভেদ

বাংলাদেশে বাংলা একাডেমির পঞ্জিকা অনুসারে নববর্ষ উদযাপন হয় ১৪ই এপ্রিল। পশ্চিমবঙ্গে এখনো চান্দ্রসৌর হিন্দু পঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়, যার ফলে নববর্ষ পড়ে ১৫ই এপ্রিল

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিচর্চা ও নববর্ষ:
তারা নববর্ষকে অনেক বেশি উৎসবপ্রবণভাবে পালন করে — কীর্তন, আবৃত্তি, হালখাতা, রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনা ইত্যাদি দিয়ে। তবে বাংলাদেশে নববর্ষ অনেক বেশি গণজাগরণ ও জাতীয় সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে উদযাপিত হয়—যেমন: মঙ্গল শোভাযাত্রা।

ইউনেস্কো স্বীকৃতি ও আন্তর্জাতিক মর্যাদা

২০১৬ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ইউনেস্কো “Intangible Cultural Heritage of Humanity” হিসেবে ঘোষণা করে। এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচিতির এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

সময় গণনার পরিবর্তন: সূর্যোদয় থেকে মধ্যরাত্রি

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলা দিন গণনা শুরু হতো সূর্যোদয়ের সময়। কিন্তু ১৪০২ বঙ্গাব্দ থেকে বাংলা একাডেমি আধুনিক আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাত ১২:০০ টায় দিন গণনার নিয়ম চালু করে।

সমালোচনার দৃষ্টিকোণ

একদল ইতিহাসবিদ মনে করেন নববর্ষ মূলত শাসকগোষ্ঠীর কর আদায়ের অস্ত্র ছিল। বহু প্রজা কর দিতে না পেরে লাঞ্ছিত হতো, এমনকি আত্মহত্যার ঘটনাও ইতিহাসে অবলিখিত। সেইসঙ্গে, বর্তমানের উৎসব অনেক সময় মূল ইতিহাসের প্রেক্ষাপট ভুলে শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

বাংলা সংস্কৃতি: দুই বাংলার মেলবন্ধন

বর্তমান বাংলা সংস্কৃতির রূপ একপাশে বাংলাদেশ, অপরপাশে পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের সাহিত্য, সংগীত, লোকশিল্প, বাউল, জারি-সারি, তৃতীয় লিঙ্গের জীবনের গাঁথা, গ্রামীণ মেলা, লালন, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল—সব মিলে আজকের বাঙালি পরিচয়।

পশ্চিমবঙ্গের অনেক নতুন প্রজন্ম এখন বাংলাদেশের সাহিত্য, লোকগান, ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী হচ্ছে। এটি এক ধরনের সাংস্কৃতিক পুনর্মিলনের বার্তা বহন করে।

বাঙালির নববর্ষ এক সভ্যতার ধারাবাহিকতা

আজকের পহেলা বৈশাখ একটি উৎসব মাত্র নয়, এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতার প্রতীক। প্রায় ৫০০ বছরের ইতিহাসে বহুবার রূপান্তরিত হলেও এর মূল প্রেরণা ছিল—সময়কে চিহ্নিত করা, সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, এবং জাতিসত্তাকে গড়ে তোলা।

প্রস্তাবনা

  • পহেলা বৈশাখের ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত

  • এই উৎসবের সঙ্গে জড়িত লোকজ শিল্প, গান, পোশাক, খাদ্য ও আচার-অনুষ্ঠান সংরক্ষণ করতে হবে

  • ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য ‘নববর্ষ উৎসব’ কেবল একদিনের আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ইতিহাসচেতনার পুনর্জাগরণ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

তথ্যসূত্র (References)

১. বাংলা একাডেমি বর্ষপঞ্জি সংক্রান্ত প্রতিবেদন (১৯৮৭)
২. ফতেহউল্লাহ সিরাজির জ্যোতির্বিজ্ঞান সংক্রান্ত রচনাসমগ্র
৩. আনিসুজ্জামান, বাঙালি সংস্কৃতি ও জাতীয়তা, বাংলা একাডেমি
৪. হুমায়ুন আজাদ, বাঙালি জাতিসত্তা
৫. Sir Jadunath Sarkar, The Mughal Empire, Oxford University Press
৬. UNESCO Heritage Listing: https://ich.unesco.org
৭. R. C. Majumdar, History of Bengal
৮. Encyclopaedia Iranica, Persian Solar Calendar Entry
৯. Rabindra Rachanabali, Visva-Bharati Publications
১০. Dhaka University Archive: Mangal Shobhajatra Documentation

Tuesday, February 04, 2025

হিটলারের উত্থান: নাৎসি জার্মানির জন্ম ও বিকাশ

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN , No comments

 


হিটলারের উত্থান: নাৎসি জার্মানির জন্ম ও বিকাশ

অ্যাডলফ হিটলার বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র। তার নেতৃত্বেই নাৎসি জার্মানি গড়ে ওঠে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। তবে হিটলারের ক্ষমতায় আসা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এটি ছিল এক দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রক্রিয়ার ফল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির অর্থনৈতিক দুর্দশা, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং জাতীয়তাবাদী আবেগের ওপর ভিত্তি করে তিনি নিজের দল গড়ে তোলেন এবং ধীরে ধীরে ক্ষমতায় আসেন। 
১. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও জার্মানির দুরবস্থা
১৯১৪-১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। ১৯১৯ সালে স্বাক্ষরিত ভার্সাই চুক্তি (Treaty of Versailles) জার্মানির জন্য ছিল অপমানজনক। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী—
  • জার্মানিকে বিপুল যুদ্ধক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়।
  • জার্মান সেনাবাহিনীকে সীমিত করে দেওয়া হয়।
  • রাইনল্যান্ডকে নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
  • জার্মানি তার উপনিবেশ ও কিছু ভূখণ্ড হারায়।
এই শর্তগুলো জার্মান জনসাধারণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি করে, যা পরবর্তী সময়ে হিটলারের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখে।
২. নাৎসি পার্টির উত্থান ও হিটলারের ভূমিকা
১৯১৯ সালে হিটলার জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে (German Workers’ Party) যোগ দেন, যা ১৯২০ সালে "ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি" (NSDAP) বা সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি নামে পরিচিত হয়।
নাৎসি পার্টির মূল আদর্শ ছিল—
  • জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা (Aryan supremacy)।
  • ইহুদি, কমিউনিস্ট ও অন্যান্য "অবিশ্বস্ত" গোষ্ঠীকে রাষ্ট্র থেকে বাদ দেওয়া।
  • ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নেওয়া।
  • একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
হিটলার তার চৌকস বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ উসকে দেন এবং নাৎসি পার্টিকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত করেন।
৩. বিয়ার হল অভ্যুত্থান ও কারাবাস (১৯২৩)
১৯২৩ সালে হিটলার এবং তার দল মিউনিখে একটি অভ্যুত্থান (Beer Hall Putsch) চালানোর চেষ্টা করে, যা ব্যর্থ হয়। তিনি গ্রেপ্তার হন এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন (যদিও মাত্র ৯ মাস কারাগারে কাটান)। কারাগারে থাকার সময় তিনি তার বিখ্যাত বই "মাইন কাম্পফ" (Mein Kampf) লিখেন, যেখানে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়।
৪. অর্থনৈতিক মন্দা ও হিটলারের জনপ্রিয়তা
১৯২৯ সালের মহামন্দা (Great Depression) জার্মানির অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।
  • বেকারত্ব আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়।
  • ব্যবসা-বাণিজ্য ধসে পড়ে।
  • সাধারণ জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়।
এই পরিস্থিতিতে জনগণ নতুন নেতৃত্বের সন্ধান করছিল। হিটলার ও তার নাৎসি পার্টি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদেরকে একমাত্র রক্ষাকারী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
৫. ১৯৩৩ সালে হিটলারের চ্যান্সেলর নিযুক্তি
১৯৩২ সালের নির্বাচনে নাৎসি পার্টি সর্বাধিক আসন লাভ করে। রাষ্ট্রপতি পল ফন হিন্ডেনবুর্গ বাধ্য হয়ে ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি হিটলারকে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেন।
ক্ষমতায় আসার পর হিটলার দ্রুত গণতন্ত্র ধ্বংস করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যান—
১৯৩৩ সালে রাইখস্টাগ অগ্নিকাণ্ড: এই ঘটনাকে ইস্যু করে তিনি কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন।
১৯৩৩ সালে সক্রিয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: "Enabling Act" পাস করে হিটলার নিজেকে স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
৬. নাৎসি শাসনের বিকাশ ও জার্মানির রূপান্তর
হিটলার ক্ষমতায় আসার পর দ্রুত নাৎসি মতাদর্শকে কার্যকর করতে শুরু করেন—
ক. রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন
  • বিরোধী দল নিষিদ্ধ করা হয়।
  • গোপন পুলিশ (Gestapo) ও SS বাহিনী গঠন করা হয়।
  • কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী ও ইহুদিদের নির্মূলের জন্য পরিকল্পনা শুরু হয়।
খ. অর্থনৈতিক ও সামরিক পুনর্গঠন
  • যুদ্ধশিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়।
  • গণহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়।
  • জার্মান সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠন করা হয় (যা ভার্সাই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন)।
গ. ইহুদি ও সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন
১৯৩৫ সালে নürenberg Laws জারি করা হয়, যা ইহুদিদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়।
১৯৩৮ সালে Kristallnacht (নাইট অব ব্রোকেন গ্লাস) ঘটানো হয়, যেখানে ইহুদিদের দোকান, উপাসনালয় ও বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়।
৭. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা (১৯৩৯)
হিটলার ক্রমাগত সামরিক শক্তি বাড়িয়ে ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড আক্রমণ করেন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।
প্রধান আগ্রাসন—
১৯৩৬: রাইনল্যান্ড দখল।
১৯৩৮: অস্ট্রিয়া সংযুক্তকরণ (Anschluss)।
১৯৩৮: Sudetenland দখল।
১৯৩৯: পুরো চেকোস্লোভাকিয়া দখল।
১৯৩৯: পোল্যান্ড আক্রমণ (এর ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স যুদ্ধ ঘোষণা করে)।
হিটলারের উত্থান ছিল জার্মানির রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির অসন্তোষ, অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসেন। একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর তিনি নাৎসি মতাদর্শ বাস্তবায়ন করেন, যা বিশ্বকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।
হিটলারের উত্থান ইতিহাসে এক চরম শিক্ষা হিসেবে বিবেচিত হয়— যেখানে একটি দেশ ও তার জনগণ ভুল নেতৃত্ব বেছে নিলে তা কীভাবে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।


Tuesday, September 17, 2024

"দ্য আলকেমিস্ট" বইটির ১০টি প্রধান শিক্ষা

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN No comments

 


"দ্য আলকেমিস্ট" 
পাউলো কোয়েলহোর "দ্য আলকেমিস্ট" একটি অনুপ্রেরণামূলক উপন্যাস, যা মানুষের স্বপ্ন, অনুসন্ধান এবং আত্ম-আবিষ্কারের উপর ভিত্তি করে রচিত। এই বইটি পাঠকদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। নিচে বইটির ১০টি প্রধান শিক্ষা তুলে ধরা হলো:

1. স্বপ্নের পথে নিরলস থাকুন: বইটি শেখায় যে, প্রত্যেকের একটি স্বপ্ন থাকে এবং জীবনের উদ্দেশ্য হল সেই স্বপ্নকে পূরণ করা। নিজের স্বপ্নের পথে চলতে কখনো হাল ছাড়া উচিত নয়।

2. ভবিষ্যতকে পরিকল্পনা না করে বর্তমানকে গ্রহণ করুন: বর্তমানেই জীবনের সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। তাই অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তায় না থেকে বর্তমান মুহূর্তকে পূর্ণভাবে বেঁচে নেওয়া উচিত।

3. নিজের অন্তর্দৃষ্টি অনুসরণ করুন: আপনার মনের ভেতরের কণ্ঠস্বর বা ইচ্ছাগুলোকে গুরুত্ব দিন। এটি আপনাকে আপনার প্রকৃত পথে পরিচালিত করবে।

4. ব্যর্থতা শেখার একটি অংশ: ব্যর্থতা হলো জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানোই হলো আসল শক্তি।

5. প্রতিটি পরিস্থিতি থেকে কিছু না কিছু শেখা যায়: প্রতিটি অভিজ্ঞতা, মানুষ, এবং ঘটনা আমাদের জীবনের শিক্ষকের মতো কাজ করে। এগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে।

6. বিশ্বাসের শক্তি: আপনি যদি নিজের প্রতি এবং নিজের স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস রাখেন, তাহলে বিশ্বও আপনাকে সাহায্য করতে আসবে। বিশ্বাস সবকিছু অর্জনের মূল চাবিকাঠি।

7. ভালোবাসা স্বাধীনতা দেয়: প্রকৃত ভালোবাসা মানুষের স্বাধীনতা এবং আত্মউন্নতির পথে সহায়তা করে। ভালোবাসার মানুষকে নিজের লক্ষ্যের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করা উচিত।

8. সফলতার অর্থ শুধু সম্পদ নয়: সফলতা মানে শুধুমাত্র সম্পদ অর্জন নয়, বরং আত্মতৃপ্তি ও নিজের লক্ষ্য পূরণের আনন্দ। জীবনের সার্থকতা ভেতরের শান্তিতে নিহিত।

9. বিশ্বের সাথে সংযোগ অনুভব করা: প্রতিটি মানুষ, প্রাণী, এবং প্রকৃতি একটি বড় মহাজাগতিক ব্যবস্থার অংশ। এই সংযোগটি বুঝতে পারলে জীবনের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে।

10. কখনো হাল ছেড়ো না: জীবনের পথে কঠিন সময় আসবেই, তবে কখনোই নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়। আপনার দৃঢ়তা এবং নিষ্ঠাই আপনাকে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের পথে নিয়ে যাবে।

"দ্য আলকেমিস্ট" এই শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যা আমাদের আত্ম-উন্নয়ন এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।


Monday, April 24, 2023

স্বস্তিকা ও হিটলার (Swastika & Hitler)

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN , No comments

 

বইসই ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধ-----


আধুনিক বিশ্ব  ইতিহাসে সবচেয়ে পরিচিত চিহ্ন হিসেবে ধরা হয় স্বস্তিকাকে। প্রাচীনকাল থেকেই চিহ্নকে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ভাবা হয়। যদিও এই চিহ্ন যুগে যুগে  নৃশংসতা ও স্বৈরাচারীতার দখলদারিত্ব আর রক্তপাতের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। স্বস্তিকা একটি সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ কল্যাণ বা মঙ্গল বা ‘সৌভাগ্য’, ‘ভালো থাকা’।সনাতন, বৌদ্ধ,জৈন ধর্মালম্বীদের কাছে স্বস্তিকা অত্যন্ত পবিত্র।স্বস্তিকার ইতিহাস বহু প্রাচীন। স্বস্তিকা উল্লেখযোগ্য ব্যবহার ভারতে দেখা যায়, যেখানে স্বস্তিকা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈনবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। স্বস্তিকাকে ব্রহ্মা ও সূর্যের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। বাকিটা পড়তে নিচে ক্লিক করুন ... 

স্বস্তিকা ও হিটলার
চিরঞ্জিত ঘোষ

মনসিজ

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN No comments


বইসই ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত পাঠ প্রতিক্রিয়া-----

কোনো বইয়ের রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া থেকে সংশ্লিষ্ট বইটির সম্পর্কে পাঠক আগে থেকেই জানতে পারেন, তাতে বইটির প্রতি পাঠকের একটা আগ্রহ জন্মায়। আর পাঠকের মতামত ও অনুপ্রেরণা লেখকের ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে । কোনো শিল্পীর ,শিল্প নিয়ে আলোচনা করার ধৃষ্টতা আমার নেই । এটি আমার প্রথম পাঠ প্রতিক্রিয়া তাই একটু বেশি সচেতন ।বাকিটা পড়তে নিচে ক্লিক করুন ... 

মনসিজ

চিরঞ্জিত ঘোষ




Sunday, February 12, 2023

ডালিয়া ১ (Dahlia 1 )

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN , No comments

ডালিয়া, এ এক সর্বজন প্রিয় ফুল। অপরূপ লাবণ্যে ও বর্ণের প্রাচুর্যে মহিমান্বিত সুন্দর একটি ফুল হলো ডালিয়া। এর বৈজ্ঞানিক নাম Dahlia Variailis। ডালিয়া কম্পোজিটি পরিবারভুক্ত। এ ফুলের আদি বাসস্থান মেক্সিকোর গুয়াতেমালায়। লর্ডবুটি নামের এক ব্যক্তি স্পেন থেকে ডালিয়া ফুল প্রথমে ইংল্যান্ডে নিয়ে আসেন। সেই ফুল দেখে সুইডেনের উদ্ভিদতত্ত্ববিদ আন্দ্রিয়াস গুস্তাভ ডাল নিজের নামের অনুকরণে ফুলের নাম রাখেন ডালিয়া। Document

নুরেমবার্গ আইন (Nuremberg Laws)

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN , No comments

 


বইসই ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধ-----

“Whoever saves one life saves the world entire”-Talmud Yerushalmi, Sanhedrin 4:12 মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘটা ভয়াবহ ও কলঙ্ক পূর্ণ কিছু হত্যাযজ্ঞের মধ্যে একটি নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । এই যুদ্ধে “দ্য ন্যাশনাল সোশালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি” বা এক কথায় নাৎসি বাহিনী এবং তাদের নেতা  অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলর হওয়ার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন বর্ণ, জাতি তথা জাতিগত বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। তিনি তার বক্তৃতা ও তার আত্মজীবনী 'মাইন ক্যাম্ফ' বইতে একটি জাতির বিশুদ্ধতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং জার্মান জাতির উৎকৃষ্টতার কথা উল্লেখ করেন । বাকিটা পড়তে নিচে ক্লিক করুন ... 


নুরেমবার্গ আইন
চিরঞ্জিত ঘোষ 

Thursday, February 09, 2023

কসমস ১ (kosmos 1)

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN No comments

কসমসএকটা গ্রিক শব্দ যার মানে হলো ঐকতান অথবা সামঞ্জস্যপূর্ণ পৃথিবী। কসমস ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Cosmos bipinnatus ।কিন্তু কসমস বা মেক্সিকান এষ্টারের রঙ এবং ধরণ ভেদে নামের ভিন্নতা জন্যে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ প্রজাতির কসমস পাওয়া যায়। যেমন Cosmos sulphureus হলো আমাদের পরিচিত উজ্জ্বল কমলা-হলুদ কসমস। Cosmos bipinnatus হলো সাদা এবং গোলাপি কসমস। এমনকি চকোলেট রঙেরও একটা কসমস আছে যার নাম Cosmos atrosanguineus। Document

Wednesday, January 25, 2023

ভক্সওয়াগেন "দ্য পিপলস কার" (Volkswagen 'The people's car')

BY Dr.Chiranjit Ghosh IN , No comments



বইসই ওয়েব ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রবন্ধ-----

“People’s car,” বা "জনগণের গাড়ি" বলতে প্রথমেই আমাদের মনে আসে “TATA NANO” এর কথা বা ফোর্ডের মডেল টি “Ford’s Model T”, ভক্সওয়াগেনের বিটল “Volkswagen’s Beetle” এবং ব্রিটিশ মোটর কর্পোরেশনের মিনি “British Motor Corp.’s Mini” যারা বিভিন্ন সময়ে ইতিহাস তৈরি করেছে । ভক্সওয়াগেনের বিটল “Volkswagen’s Beetle” এর ইতিহাস হিটলারের নাৎসি পার্টীর সাথে জড়িত। বাকিটা পড়তে নিচে ক্লিক করুন ... 

                                                               

ভক্সওয়াগেন "দ্য পিপলস কার "

চিরঞ্জিত ঘোষ